হৃদয়ে প্রথম ঋতু পঁচিশে বৈশাখ
         — অশোককুমার লাটুয়া 

এক একটা দিন মনে হয়  অন্যান্য দিনের চেয়েও অনেক বেশি হিরন্ময়। আলো ছড়িয়ে দেয় নম্র নমস্কারে। সে আলো শুধু বাইরে নয়, ছড়িয়ে পড়ে লালপান বিবি হৃদয়ের  সবখানে। মনে হয় " হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে ঝলমল করে চিত্ত। "
সব মানুষ নয় এক একজন মানুষ ভোরের সূর্যটাকেও ঋণী করে দেয় পঁচিশে বৈশাখের জন্মদিনে।
সে মানুষ অন্য মানুষ যে কিনা
আদুরে বেড়ালের মতো অক্ষরগুলোকে কাছে ডেকে নিয়ে সোহাগে ফোটায় রক্তকরবী, ক্যামেলিয়া কিংবা
রডোডেনড্রন গুচ্ছ।
সে মানুষটি ঝিলমে হংসবলাকা উড়িয়ে দিয়ে
তালগাছকে একপায়ে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্ধ কানাইয়ের গান শোনে আপনমনে।
সে মানুষটি ভারতবর্ষের মানচিত্রে গোরাকে হাজির করে সুচরিতার সামনে। অমিত আর লাবণ্যকে নিয়ে যায় শেষের কবিতার শিলং পাহাড়ে।
এক একজন মানুষ কাবুলিওয়ালা, ফটিক, দেনাপাওনার নিরূপমা কিংবা ডাকঘরের অমল হয়ে যায়
রাজার চিঠির প্রতীক্ষায়।
নিভৃত যতনে কে যে কাকে ভালোবাসে প্রাণ চায় চক্ষু না চায় বলে গান হয়ে ওঠে সে মানুষটি। সে মানুষটি পরাণের সাথে মরণখেলা খেলতে চেয়ে
দুয়ার ভাঙা রাতের ঝড়ে
বেরিয়ে পড়ে একলা পথিক পথের টানে।
এক একদিন আরো বেশি আলো ছড়িয়ে পড়ে লালপান বিবি হৃদয়ের সবখানে।

সে মানুষটি ভোরের সূর্যকেও ঋণী করে দেয় পঁচিশে বৈশাখের জন্মদিনে।
সে মানুষটি হিমালয়ের চেয়েও উঁচু, আকাশের চেয়েও সীমানাহারা, বাতাসের চেয়েও বাঁধনহারা আর সমুদ্রের চেয়েও গভীর।
এমন মানুষ তো মানুষ নয়
ঠাকুর নিশ্চয়। সে ঠাকুর আর কেউ নয় — বিশ্বের কবি, গ্রীষ্মের কবি রবীন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথ মানেই
হৃদয়ে প্রথম ঋতু পঁচিশে বৈশাখ।


Comments